শিউলিমালা একাডেমির একাডেমিক বিভাগের অধীনে ১৩ এপ্রিল ২০২৩এ আয়োজিত হলো বিশেষ সেমিনার, ‘বঙ্গবিজয়: বাংলা অঞ্চলের ভাগ্য বদলের নওরোজ’।
১৯ রমজান, ঐতিহাসিক বঙ্গবিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারটি নিয়েছেন একাডেমির জনসংযোগ ও মিডিয়া মুখপাত্র শ্রদ্ধেয় মিমি বিনতে ওয়ালিদ।
যে জাতি অতীত ইতিহাস জানে না, সে জাতি কখনোই তার ভবিষ্যৎকে বিনির্মাণ করতে পারে না। ভবিষ্যৎ বিনির্মানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে সত্য এবং হাকীকতকে জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটিয়ে সোনালী ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আহবান জানান আলোচক।
বঙ্গবিজয় দিবস বাঙ্গালী জাতির জন্য যুগান্তকারী ঘটনার নাম। বিশ্ব দরবারে পশ্চাদপদ অনুন্নত এক জাতির মাথা উঁচু করে সমাদৃত হওয়ার উপাখ্যান বঙ্গবিজয়। বহিরাগত সেনদের বর্ণপ্রথা, নিষ্ঠুর অত্যাচার, মানুষের মর্যাদা হননকারী শাসনামলে অতিষ্ঠ বাঙ্গালী জাতি অপেক্ষায় ছিলো এমন এক ত্রাণকর্তার, যার মাধ্যমে তারা মানুষ হিসেবে নায্য অধিকার পাবে। আর সেই অত্যাচারিত জনগোষ্ঠীই সেসময় আহবান জানায় সুদুর আফগান থেকে আগত তরুন তুর্কী ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীকে।
মজলুমের হাহাকার যখন বাংলার আকাশ বাতাস ভারী করে তুলেছিলো, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, জুলুম-শোষণ, বর্ণবাদ আর গোত্রপ্রথা যখন বাংলার মানুষের ভাগ্যলিপি হয়ে দাঁড়িয়েছিলো, সেসময় বাংলার মাটিতে পা রাখেন বখতিয়ার খলজি। যার ঘোড়ার খুরের শব্দে কম্পন ধরেছিলো শোষকের হৃদয়ে, কেঁপে উঠেছিলো জুলুমের সিংহাসন। সে মহান অশ্বারোহী এলেন এবং দুনিয়াকে জানিয়ে দিলেন, খলজিরা প্রতিদিন আসেনা; যখন আসে তখন মেঘ কেটে যায়, মুষলধারে বৃষ্টি নামে, নদীর বুকে স্রোত উঠে। তারা এলে ইতিহাসের গতিধারা বদলে যায়, সভ্যতার দুয়ার খুলে যায়, মানুষ তার হারানো অধিকার ফিরে পায়, কবিরা ছন্দ খুঁজে পায়, গায়করা খুঁজে পায় তাদের হারানো সুর।
বঙ্গবিজয়ের ফলে এ জাতির ভাগ্যাকাশে নতুন সূর্য উদয় হয়। যে জাতি পূর্বে শিক্ষা-সাংস্কৃতিক দিক থেকে কোনো অবস্থানেই ছিলো না, সে জাতি দারসবাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জ্ঞানকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। এখানে দারস প্রদান করতে আসেন শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার মতো বিখ্যাত মুহাদ্দিস। প্রতিটি এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠে মক্তবসমূহ। যেখানে শিশুদের গুঞ্জনে মুখরিত হতো প্রভাত। সেই ধারাবাহিকতায় আজও টিকে আছে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার মক্তবগুলো।
স্থাপত্যের দিক থেকে বাংলা অঞ্চলে অনন্য মাত্রার সংযোজন ঘটে। ছোট সোনা মসজিদ, আদিনা মসজিদসহ অসাধারণ সব স্থাপত্যের মাধ্যমে এ জাতির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়।
বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটে এই বঙ্গবিজয়ের পরেই। যে ভাষা এতদিন অবহেলিত, নিষ্পেষিত, হেয়প্রতিপন্ন ছিলো, সে ভাষায় তৈরি হয় এক সমৃদ্ধ সাহিত্য ভাণ্ডার। সেই সময়েই বাংলা ভাষার উৎকর্ষতা সাধনের ফলেই আজ এ ভাষা বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা, এত এত মানুষের মুখের ভাষা। সাহিত্য, শিল্পচর্চা, মিউজিককেরও বিকাশ ঘটে এই সময়ে। এভাবে সমৃদ্ধ একটি জাতিতে পরিণত হয় বাঙ্গালী জাতি।